রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞার পরও নির্বিচারে অবকাঠামো

১২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

নুপা আলম : বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) মতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ১৩ টি এলাকার (ইসিএ) একটি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ইসিএ আইন মতে, এই দ্বীপে এমন কোন কাজ করা যাবে না যেখানে দ্বীপের পানি, মাটি, বায়ু বা প্রাণীর ক্ষতি করে। এখানে কোন প্রকার অবকাঠামো নিমার্ণও করা যাবে না। আর অবকাঠামো নিমার্ণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্রও দিতে পারেনা আইন মতে।

তার সাথে যুক্ত হয়েছে ২০২২ সালে সরকার ঘোষিত একটি প্রজ্ঞাপন। যে প্রজ্ঞাপনে সেন্টমার্টিনকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী এখানে ইট-সিমেন্ট আনাই নিষিদ্ধ। শুধু বাঁশ-কাঠ দিয়ে ইকো-ফ্রেন্ডলি অবকাঠামো করা যেতে পারে।

কিন্তু কে শুনে কার কথা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই দ্বীপে একের পর এক অবকাঠামো তৈরি অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালে সেন্টমার্টিনে এক জরিপ শেষে এনভায়রনমেন্ট পিপল নামের একটি পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ জানিয়েছিল, দ্বীপটিতে ছোট-বড় ১২৩টি আবাসিক হোটেল ও কটেজ ছিল। এর মধ্যে আড়াই ডজনের বেশি ছিল দুই ও তিনতলা পাকা ভবন। ৩ বছরের ব্যবধানে পর একই সংগঠন গত ডিসেম্বরে এক জরীপ চালিয়ে জানিয়েছে, যেখানে হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ দাঁড়িয়েছে আড়াই শতাধিক। যেখানে গত ৩ বছরে নতুন করে তৈরি হয়েছে ১৩০টির বেশি অবকাঠামো।

এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘ইসিএ বা মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া কাগজের ফাইলে বন্ধি একটি বিষয়। এখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রশাসন আন্তরিক না। প্রকাশ্যেই টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে গিয়ে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন এসব স্থাপনা বন্ধে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে আসেন। অভিযান চালান। ক্ষেত্রে বিষয়ে মামলা করেন। কিন্তু শেষ পর স্থাপনা নিমার্ণ বন্ধ হচ্ছে না।

গত ডিসেম্বরে যে অবস্থান দেখা গেছে এক মাসের ব্যবধানে তা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাশেদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দ্বীপে ২০ টির বেশি স্থাপনা নিমার্ণাধিন রয়েছে।’

আর রাশেদুল মজিদের দেয়া তথ্যের সাথে মিলে যায় দ্বীপের সার্বিক পরিস্থিতি। যেখানে বর্তমানে অবাধে চলছে অবকাঠামো নিমার্ণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্প্রতি তদন্তে এরূপ ১২ টি স্থাপনা নিমার্ণের সত্যতাও পেয়েছে। যার জের ধরে গত ২৫ জানুয়ারি সেন্টমার্টিনের নিমার্ণাধিন ১২ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা ফাইজুল কবির বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া অবকাঠামো নিমার্ণ ও সরকারে আদেশ অমান্য করার দায়ে এই মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলায় ১২ প্রতিষ্ঠান ও মালিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হল, ট্রফিকানা বিচ রিসোর্ট এর মালিক শেখ ফরহাদ, জলকুটি রিসোর্টের মালিক ড.মমি আনসারি, দক্ষিণাহাওয়ার মালিক ফেরদৌস সাগর, আরণ্যক ইকো রিসোর্টের মালিক মোহাম্মদ খাইরুল আলম, মেঘনা বিচ ভিউ রিসোর্টের মালিক মোশারফ হোসেন, ডিঙ্গি ইকো রিসোর্টের মালিক মো. মোবাশ্বির চৌধুরী, জল কাব্য রিসোর্টের মালিক চপল কর্মকার ও চঞ্চল কর্মকার, গ্রীন বিচ রিসোর্টের মালিক আজিত উল্লাহ, সূর্য¯œানের মালিক ইমরান, সান্ড এন্ড সেন্ড টুইন বিচ রিসোর্টের মালিক ইমতিয়াজুল ফরহাদ, নোঙর বিচ রিসোর্টের মালিক সাজ্জাদ মাহমুদ, নীল হওয়ার মালিক আবদুল্লাহ মনির।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা ফাইজুল কবির বাদি হয়ে দায়ের করা মামলাটি সংশ্লিষ্ট আইনে লিপিবদ্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে।

মামলার বাদি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা ফাইজুল কবির জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সরেজমিনে তদন্ত শেষে প্রমাণ পাওয়ার পর এই ১২ প্রতিষ্ঠানের ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ ১২ টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দ্বীপে আরও অনন্ত ১০ টি প্রতিষ্ঠানের নিমার্ণ কাজ দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থাপনা নিমার্ণে জড়িতদের দেয়া তথ্য বলছে, দ্বীপে সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার ৪-৫ টি স্থাপনা নিমার্ণ অব্যাহত রয়েছে। এসব স্থাপনা তৈরিকে পুঁজি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দ্বীপে নিয়ে যাচ্ছে নিমার্ণ সামগ্রী। আর সেই সিন্ডিকেট থেকে উচ্চ মূল্য সামগ্রী কিনে তৈরি হচ্ছে অন্যান্য স্থাপনাও। পুরো সিন্ডিকেটটি স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। যদিও চেয়ারম্যান বলেছেন ‘কোনোভাবেই আমি এর সঙ্গে জড়িত না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888